top of page
Search

তীব্র তাপদাহে খরা মোকাবেলায় টি প্লান্টার ও চা চাষি ভাইদের করণীয়

  • Writer: Dr. Mohammad Shameem Al Mamun
    Dr. Mohammad Shameem Al Mamun
  • Apr 12
  • 6 min read

Updated: Apr 13

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন চা শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই চা গাছ অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। খরার কারনে চা উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পেতে পারে। প্রথমে আসা যাক, খরা বলতে আমরা কি বুঝি? যখন মাটি হতে উদ্ভিদে পানি সরবরাহের পরিমান উদ্ভিদের স্বাভাবিক শরীরতাত্বিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় পানির তুলনায় কম হয় তখন আমরা এ অবস্থাকে ‘খরা’ বলে থাকি। চা চাষের জন্য তাপমাত্রা ১৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০০ মিমি. এর উপরে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমান অর্থাৎ আদ্রতা ৭০-৯০% আদর্শ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে গেলে উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চা গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টিপাতের মাসিক বণ্টন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চায়ের মৌসুমে তা কমপক্ষে ১০০ মিমি থাকা বাঞ্চনীয়। মাসিক বৃষ্টিপাত ১০০ মিমি এর কম হলে চা গাছ খরায় টিকতে পারেনা। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চা বাগানসমুহে বর্ষার সময়ে পানির পর্যাপ্ততা এবং শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল কখনও মে মাস পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময় চা গাছ প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারে না। খরার কারনে প্রস্বেদনের মাধ্যমে যেমন গাছের উপরিভাগ হতে পানি হ্রাস পায় তেমনি বাস্পীভবনের মাধ্যমে মাটির উপরিভাগ হতেও পানি বাস্পীভূত হয়। অর্থাৎ এ সময়ে খরার প্রভাবে চা গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ সেমি. চা গাছের উপরিভাগ হতে ঘন্টায় গড়ে প্রায় ১.১৫ গ্রাম পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি বা খরায় প্রভাবে মে মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় না। এর পর থেকে সময়ে সময়ে বাড়তে থাকে তাপদাহ। এতে করে চা বাগানে নতুন করে পাতা গজায় না, উল্টো অতি খরায় চায়ের পাতা শুকিয়ে যায়। পাশাপাশি মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় চা গাছের পাতা গজানো কমে যায়। তীব্র তাপদাহের কারণে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় থাকে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা চাষিগণ। বৃষ্টির অভাবে খরা প্রবণ এলাকার চা-বাগানসমূহে সময়মতো চায়ের কুঁড়ি গজায় না। খরায় বয়স্ক গাছসহ চায়ের চারা গাছও শুকিয়ে মারা যায়। এতে যেমন চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয় তেমনি গুণগতমানও ব্যাহত হয়। তীব্র খরায় রেড স্পাইডার মাইট (লাল মাকড়) ও থ্রিপ্সের আক্রমণেরও শঙ্কা থাকে। এই মাকড় ও থ্রিপ্স চা-গাছের জীবনচক্র নষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চা গাছের শারীরবৃত্তীয় উন্নয়ন ও চায়ের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রশমন ও অভিযোজন কৌশল গড়ে তোলা জরুরী। চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।


খরা সহনশীল জাতঃ বাংলাদেশের খরা প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার জন্য খরা প্রতিরোধী চায়ের জাত নির্বাচন টেকসই চা চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। উদাহরণস্বরূপ, গভীর ক্রমবর্ধমান শিকড় এবং উচ্চ বিপাকীয় উপাদান (যেমন- অ্যামিনো অ্যাসিড এবং শর্করা) বৈশিষ্ট্যযুক্ত চায়ের জাতগুলি খরার জন্য অত্যন্ত প্রতিরোধী প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণত ছোট পাতাওয়ালা চায়না জাতের চা গাছগুলি বড়পাতাওয়ালা আসাম জাতের তুলনায় খরা সহিষ্ণু। এছাড়াও বীজজাতের চা গাছগুলি ক্লোন জাতের চা গাছের তুলনায় তুলনামূলকভাবে খরা সহিষ্ণু হয়। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের চা শিল্পের জন্য ২৩টি উচ্চ ফলনশীল ও গুণগতমানসম্পন্ন ক্লোন এবং ৫টি বাইক্লোনাল বীজজাত অবমুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে, BT2, BT4, BT7, BT8, BT11, BT12, BT17, BT18, BT19, BT21, BT23 এবং BTS1, BTS5 খরা সহনশীল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই খরা প্রবন এলাকায়, উক্ত জাতের চা চারা রোপণ করা যেতে পারে।


সেচঃ চায়ের খরা মোকাবেলায় সেচই একমাত্র ও সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা। তাই খরা মোকাবেলায় কৃত্রিম উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্প্রিংকলার সেচের ব্যবস্থা করা যায়। তবে যাদের স্প্রিংকলার সেচের ব্যাবস্থা নেই কিন্তু পানির ভালো উৎস রয়েছে, তারা পাম্প বা হোস পাইপ ব্যবহার করে বাচ্চা চারায় সেচের ব্যবস্থা করতে পারেন। নতুন চা আবাদী এলাকায় ও চা বাগানের লাইট স্কিফ এরিয়া সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিটি চা বাগানে সেচ ব্যবস্থা থাকা বাঞ্চনীয়। কার্যকর সেচ ব্যবস্থার জন্য সেচের পানি চা গাছের শেকড়ের গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছানের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম বছরের চা আবাদীর অপরিণত চা গাছগুলিতে ৪-৭ দিনের ব্যবধানে গাছ প্রতি ৪০০-৫০০ মিলি হারে এবং দ্বিতীয় বছরের গাছগুলির জন্য পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করা উচিত অর্থাৎ ৭-১০ দিনের ব্যবধানে সেচ দিতে হবে। এতে খরা মোকাবিলার সাথে সাথে লাল মাকড় ও লাল মরিচার প্রাদুর্ভাবও যথেষ্ট কমে যাবে। অপরিণত চা আবাদীর জন্য ড্রিপ ইরিগেশন এর মাধ্যমে পানির সাশ্রয় করা যায়। এটি চা গাছের বৃদ্ধির জন্য মাটির অবস্থার উন্নতি করতেও সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট আকারের ড্রিপ ইরিগেশন প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় চায়ের উৎপাদনশীলতা ৪০% বৃদ্ধি করেছে। অতএব যেখানে পর্যাপ্ত পানির উৎস নেই সে স্থানগুলির জন্য খরা মোকাবেলায় একটি ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবস্থা সবচেয়ে উপযুক্ত।


জলাধার নির্মাণ ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংঃ জলাধার হল মানুষের তৈরি বা প্রাকৃতিক জলাধার যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য বাগানে জলাধার তৈরি করা উচিত। চা বাগানের জলাধারগুলির মধ্যে রয়েছে লেক, ছড়া এবং পুকুর যা খরার সময় সেচের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। চা বাগানের কুঞ্চি এলাকায় জলাধার নির্মাণ ও বাংলো বা কারখানার ছাদ বা চালা থেকে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করা যেতে পারে। যা সেচের জন্য পানির অন্যতম উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চা বাগানের ভিতরে খালি জায়গায় গভীর জলাধার খনন করে সেচের উদ্দেশ্যে পানির উৎস নিশ্চিত করতে হবে।


ছায়াগাছঃ চা আবাদীতে পর্যাপ্ত ছায়াগাছের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে চা গাছ অত্যধিক তাপ এবং বিকিরণ থেকে রক্ষা পাবে; সেকশন ঠান্ডা থাকবে ও মাটির আদ্রতা সংরক্ষণ থাকবে। ছায়াতরু চা আবাদীতে মাটি হতে বাস্পীভবন প্রক্রিয়ায় পানি হারানো এবং প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতা থেকে পানি হারানো কমাতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে খরা মোকাবিলায় সহায়ক হবে। তাছাড়া পর্যাপ্ত ছায়াগাছ সম্পন্ন সেকশনে লাল মাকড়ের আক্রমনও কম হয়। সেজন্য খরা প্রবণ এলাকায় অস্থায়ী ছায়াগাছ হিসেবে বগামেডলা বা ক্রোটোলারিয়া বপন করতে হবে; আধাস্থায়ী ছায়াগাছ হিসেবে ইন্ডিগোফেরা এবং স্থায়ী ছায়াগাছ হিসেবে পর্যাপ্ত কড়ই প্রজাতির ছায়াগাছ অর্থাৎ Albizia odoratissima, Albizia lebeck এবং Derris robusta প্রজাতির ছায়াগাছ লাগাতে হবে। বাগানে পর্যাপ্ত ছায়াগাছ থাকলে দুপুরে চা গাছের পাতার তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে কমাতে সক্ষম। এছাড়াও পর্যাপ্ত ছায়াগাছ থাকলে সেকশনে লাল মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছায়াতরু প্রতি বছর প্রতি হেক্টর জমিতে পাঁচ টন জৈব পদার্থ যুক্ত করে থাকে। অতএব, বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে যথাযথ ছায়াগাছ স্থাপন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।


মালচিংঃ খরা মোকাবেলায় অপরিণত কিংবা পরিণত চা আবাদীর জন্য মালচিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খরার পূর্বে মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে। অপরিণত চা আবাদীতে পর্যাপ্ত কভার ক্রপ্স রোপন ও মালচ ম্যাটেরিয়াল হিসেবে কচুরীপানা, গুয়াতেমালা, প্রুনিং লিটার, কাট জঙ্গল, বাগরাকোট, ভাট, লতাপাতা, খড়, কালো পলিথিন ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে খরা শুরুর পূর্বেই মালচিং করা উচিত। মালচিং বাষ্পীভবনের ক্ষতি কমিয়ে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে। মালচিং গ্রীষ্মকালে মাটির তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। তবে মালচ ম্যাটেরিয়ালগুলো চা গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দূরে ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও খরাকালীন সেকশন আগাছামুক্ত রাখতে হবে। কারণ আগাছা মাটি হতে প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করে নেয় যা খরাকে আরও ত্বরান্বিত করে। আবার আগাছা যেহেতু লাল মাকড়ের পোষক গাছ হিসেবে কাজ করে তাই আগাছা ধ্বংসের মাধ্যমে লাল মাকড়ের উপদ্রবও হ্রাস পায়।


অ্যান্টিট্রান্সপিরেন্ট ব্যবহারঃ অ্যান্টিট্রান্সপিরেন্ট হল এমন পদার্থ যা উদ্ভিদের পাতার বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া কমাতে ব্যবহৃত হয়। খরায় আক্রান্ত স্কিফ এরিয়ার চা আবাদীতে পাতার প্রস্বেদন কমাতে এন্টি-ট্রান্সপিরেন্ট হিসেবে কেওলিন, কিসেরাইট, মিউরিয়েট অব পটাশ, পটাশিয়াম সালফেট, ফিনাইল মারকারী এসেটেট, এবসিসিক এসিড, ডলুমাইট ও এসপিরিন ফলিয়ার প্রয়োগ করা যেতে পারে। কেওলিন হলো খনিজ থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা চা গাছের পাতার উপর একটি পাতলা স্তর/আবরণ তৈরি করে, অন্যদিকে কিসেরাইট স্টোমাটা বা পত্ররন্ধ বন্ধ করে দেয় ফলে পাতার বাষ্পীভবন হ্রাস পায় ও পাতার টারজিডিটি সমুন্নত রাখে। খরা শুরু হওয়ার পরপরই ৫% হারে অর্থাৎ ১০০ লিটার পানিতে ৫ কেজি কেওলিন বা কিসেরাইট স্প্রে করা উচিত। এছাড়াও মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সার চা গাছের পাতায় উপরিপ্রয়োগ খরা মোকাবিলায় বেশ সহায়ক। খরা মোকাবেলায় ২% মিউরিয়েট অব পটাশ বা ২% সালফেট অব পটাশের দ্রবণ ১৫ দিন অন্তর অন্তর সিঞ্চণ করতে হবে। এতে চা গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়াকে হ্রাস করে পানির অপচয় রোধ করে সেই সাথে এমওপি প্রয়োগে সেকশনে লাল মাকড়ের সংখ্যাও কমে যাবে। পাতায় পটাশিয়ামের শোষণ বাড়ানোর জন্য মিউরিয়েট অব পটাশ বা ২% সালফেট অব পটাশের দ্রবণের সাথে হেক্টর প্রতি ২ কেজি ইউরিয়া মেশানো যেতে পারে।


সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনাঃ তীব্র খরায় চা আবাদীতে রেড স্পাইডার মাইট (লাল মাকড়) ও থ্রিপ্সের আক্রমণের শঙ্কা থাকে। এই মাকড় ও থ্রিপ্স চা-গাছের জীবনচক্র নষ্ট করে দেয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চা আবাদীতে লাল মাকড় খুবই অনিস্টকারী। উচ্চতাপমাত্রায় লালমাকড়ের প্রজনন ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। প্রচন্ড খরায় লাল মাকড় ও থ্রিপ্সের আক্রমণ তরান্বিত হয়। লাল মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত রোপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেক্ষত্রে লাল মাকড় প্রবন এলাকায় লাল মাকড় প্রতিরোধী ক্লোন/জাত যেমন- বিটি২১ লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও চা আবাদীতে পর্যাপ্ত ছায়াগাছ রোপন করতে হবে। আগাছা লাল মাকড়ের বিকল্প পোষক। তাই প্রথম বৃষ্টিপাতের পর আগাছা যাতে নিয়ন্ত্রনে থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। দমকা বাতাসে লালমাকড় ছড়ায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে সাধারনত: দমকা বাতাস বয়ে থাকে। তাই দমকা বাতাস প্রতিরোধকারী (Wind breaker) হিসেবে সেকশনের চারদিকে একসারি নিমজাতীয় ছায়াগাছ উত্তোলন অতীব জরুরী। অ্যামোনিয়াম সালফেট, ফসফেট ও পটাশ সার এর ফলিয়ার প্রয়োগ লাল মাকড় দমনে সহায়ক। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জৈব বালাইনাশক যেমন- নিম, মেহগিনি, বিষকাটালী, ভাট, ধুতুরা, ল্যান্টানা, ঘাঘরা ইত্যাদি গাছের নির্যাস ব্যবহার করে চায়ের লাল মাকড় ও থ্রিপ্স দমন করা যায়। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় লাল মাকড় ও থ্রিপ্স দমনে জৈব বালাইনাশক হিসেবে উপকারী জীবাণু (এন্টোমোপ্যাথোজেন) যেমন- বিউভেরিয়া বেসিয়ানা, মেটারহিজিয়াম এনিসোপ্লায়ি, পেসিলোমাইসিস ফিউমসরোসিয়াস, সিউডোমোনাস ফ্লোরেসেন্স, ভারটিসিলিয়াম লিকানি @ প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে পাতার উভয় পাশে ভালভাবে স্প্রে করে দিতে হবে। রাসায়নিক দমনের ক্ষেত্রে, আগাম শস্য মৌসুমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে হেক্টর প্রতি ২.২৫ কেজি হারে সালফার (কুমুলাস ৮০ ডব্লিউপি) ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৬ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ৬০০ মিলি হারে ফেনাজাকুইন (ম্যাজিস্টার ১০ ইসি) বা ৫০০ মিলি হারে হেক্সিথায়াজক্স (মাইট স্ক্যাভেঞ্জার ১০ ইসি) বা ৪০০ মিলি হারে স্পাইরোমেসিফেন (ওবেরন ২৪০ এসসি) ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৬-৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। থ্রিপ্স দমনে আঠালো হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। হেক্টর প্রতি ১০০টি স্টিকি ট্র্যাপ এর প্রয়োজন হবে অথবা ছায়াগাছে ২০ ফুট অন্তর স্টিকি রোল ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসায়নিক দমনের ক্ষেত্রে, হেক্টর প্রতি ৫০০ মিলি হারে কুইনালফস (কুইকলাক ২৫ইসি) বা ২০০ মিলি হারে স্পিনোসেড (ট্রেসার ৪৫এসসি) বা ৩০০ গ্রাম হারে ডাইনোটিফুরান (যোদ্ধা ২০ডব্লিউএসজি) বা ৫০০ গ্রাম হারে এসিফেট+ইমিডাক্লোপ্রিড (অটোমিডা ৭০ডব্লিউডিজি) বা ৫০০ মিলি হারে ফ্লোমেটোকুইন (গ্লাডিয়াস ১০এসসি) ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 
 
 

Comments


Copyright ©2025 Mohammad Shameem Al Mamun

bottom of page